সকালে পড়ার জন্য শক্তিশালী দোয়া কি? সকালে ঘুম থেকে উঠে যে দোয়া পড়তে হয়

একটি মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজ শুরু হওয়া উচিত আল্লাহর নামে। আর দিনের সূচনা তো হওয়া উচিত আরও বেশি বরকতময় ও ইবাদতপূর্ণ। ঘুম থেকে জেগে ওঠা হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নতুন দিনের উপহার, যেখানে আমরা আবার নতুনভাবে জীবন শুরু করার সুযোগ পাই। তাই সকাল শুরু করার সাথে সাথে কিছু শক্তিশালী দোয়া ও জিকির আমাদের হৃদয়, মন ও আত্মাকে প্রশান্তি দেয় এবং দিনটি আল্লাহর বরকত দ্বারা পরিপূর্ণ হয়।

ইসলামে সকালে ঘুম থেকে উঠে নির্দিষ্ট কিছু দোয়া পড়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এই দোয়াগুলোর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে পারি, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে পারি এবং দিনটিকে আরও সফলভাবে শুরু করতে পারি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে যে দোয়া পড়তে হয়

নবী করিম (সা.) আমাদেরকে শিখিয়েছেন, ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম যে দোয়াটি পড়া উচিত তা হলো:

الحمد لله الذي أحيانا بعدما أماتنا وإليه النشور
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানাআ বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের মৃত্যু (ঘুম) পর আমাদের পুনরায় জীবিত করলেন এবং তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে।

এই দোয়া নবীজি (সা.) নিয়মিত পড়তেন এবং সাহাবিদেরও শেখাতেন। ঘুম থেকে জেগে উঠে এই দোয়া পাঠ করা এক ধরণের কৃতজ্ঞতার প্রকাশ এবং এটাই একজন মুসলিমের সকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সূচনা।

সকালে পড়ার জন্য শক্তিশালী কিছু দোয়া

সকালে ঘুম থেকে উঠে শুধু একটি দোয়াই নয়, বরং আরও কিছু সুন্দর ও প্রভাবশালী দোয়া রয়েছে, যেগুলো সকাল বেলা পড়লে আল্লাহর রহমত ও সুরক্ষা লাভ করা যায়।

১. আয়াতুল কুরসী

আয়াত: সূরা বাকারা – আয়াত ২৫৫
অর্থ: “আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কেউ উপাস্য নন, তিনি চিরঞ্জীব, সৃষ্টির ধারক-বাহক…”
সকাল ও সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসী পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

২. তিন কুল (সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস)

প্রত্যেকটি সূরা তিন বার করে পড়া উচিত। এটি সকাল ও সন্ধ্যায় পড়া সুন্নাহ। এতে জিন-শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত পাওয়া যায়।

৩. দোয়া: সকালের নিরাপত্তা ও বরকতের জন্য

اللّهُمّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফি’আঁ, ওয়া রিজকান তইয়্যিবান, ওয়া আমালান মুতাক্বাব্বালান।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, হালাল রিজিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি।

৪. সকালে পড়ার জিকির

“সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি” – ১০০ বার
এতে পাপসমূহ মাফ হয় এবং জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপিত হয় (সহীহ হাদীস)।

৫. “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু…” – ১০ বার

এই জিকির পড়লে শয়তান সারা দিন কাছে আসতে পারে না।

সকাল শুরু করার ইসলামিক গুরুত্ব

ইসলাম একজন মুসলমানকে সময়ের গুরুত্ব শেখায়। সকাল হচ্ছে কাজের এবং ইবাদতের শুরু। হাদীস শরীফে এসেছে—

“হে আল্লাহ! আমার উম্মতের সকালের সময়ে বরকত দান করো।” – (তিরমিজি)

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, সকাল হলো এমন একটি সময় যখন আল্লাহ বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। তাই ঘুম থেকে উঠেই আমাদের উচিত প্রথমেই দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে দিন শুরু করা।

সকালে দোয়া পড়ার উপকারিতা

১. আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় হয়: ঘুম থেকে জেগে ওঠা একটি ছোট মৃত্যু থেকে ফিরে আসার মতো। এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা আবশ্যক।

২. আত্মিক প্রশান্তি: সকালে দোয়া ও জিকির করলে মানসিক শান্তি ও আত্মিক তৃপ্তি আসে।

৩. শয়তান থেকে রক্ষা: সকালে আল্লাহর নাম নিলে শয়তান আমাদের থেকে দূরে থাকে।

৪. রোগ-ব্যাধি থেকে হেফাজত: অনেক হাদীসে বলা হয়েছে, নিয়মিত দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াত করলে অসুস্থতা থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।

সকালে দোয়া পড়ার সহজ পদ্ধতি

  • ঘুম থেকে উঠেই বসে এই দোয়াগুলো স্মরণ করুন

  • চাইলে একটি ছোট কাগজে লিখে বিছানার পাশে রাখুন

  • মোবাইলে দোয়ার অ্যাপ ব্যবহার করুন

  • পরিবারের সবাই মিলে সকালে দোয়া পাঠের অভ্যাস গড়ে তুলুন

সকাল হলো বরকতময় সময়। একজন মুসলমানের উচিত এই সময়টিকে আল্লাহর স্মরণ ও দোয়া দ্বারা শুরু করা। ঘুম থেকে উঠে কৃতজ্ঞতার দোয়া পাঠ, আয়াতুল কুরসী, তিন কুল, ও কিছু শক্তিশালী জিকির আমাদের দিনকে সুন্দর, নিরাপদ ও শান্তিময় করে তোলে। মনে রাখতে হবে, দিন শুরু যেমন হবে, পুরো দিনের মানসিকতা তেমনই হবে। তাই দিনটি শুরু হোক আল্লাহর নাম নিয়ে, দোয়া দিয়ে।

Leave a Comment