সেহরি ও ইফতারের সঠিক সময় ইসলামিক নিয়মে

রমজান মাস ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি—সিয়াম বা রোজা পালনের মাস। এই পবিত্র মাসে রোজা রাখা শুধু একটি ধর্মীয় কর্তব্য নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহৎ সুযোগ। রোজা পালনের জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট দুটি সময়ের যথাযথ জ্ঞান—সেহরি এবং ইফতার। কারণ এই দুটি সময় ঠিক না জানলে রোজা সহীহ হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ থেকে যেতে পারে।

ইসলাম এমন একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা যেখানে প্রতিটি কাজের নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম নির্ধারিত আছে। সেহরি ও ইফতারের সময় সম্পর্কেও রয়েছে কুরআন ও হাদীসভিত্তিক সুস্পষ্ট নির্দেশনা। তাই আজকের এই রচনায় আমরা জানবো—ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সেহরি ও ইফতারের সময় কখন, কীভাবে নির্ধারণ করতে হয় এবং এই সময়গুলোর মাহাত্ম্য কী।

সেহরি কখন শুরু ও শেষ হয় – সুবহে সাদিকের গুরুত্ব

সেহরি খাওয়ার শেষ সময় হলো সুবহে সাদিক বা ফজরের সময় শুরুর ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত। কুরআনে বলা হয়েছে:

“আর তোমরা পানাহার করো সুবহে সাদিক পর্যন্ত, যখন পর্যন্ত সাদা রেখা কালো রেখা থেকে পৃথক হয়ে যায়।”
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৭)

এখানে “সাদা রেখা” বলতে ভোরের প্রথম আলো বোঝানো হয়েছে। এটি একেবারে ফজরের সূচনা, যেখানে আজানের সময় শুরু হয়। তাই সেহরি শেষ করতে হবে এই সময়ের ঠিক পূর্বে। আজান হওয়ার পর কোনো কিছু খেলে রোজা ভেঙে যাবে।

সেহরির বরকত – রাসুল (সা.) কী বলেছেন

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:

“তোমরা সেহরি করো, কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে।”
(সহীহ বুখারী)

আরেক হাদীসে এসেছে, “সেহরি খাওয়ার মাঝে আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাদের রহমত ও দোয়া রয়েছে।”
সেহরি না খেয়েও রোজা রাখা যাবে, তবে এটি সুন্নাত পরিত্যাগ করা এবং বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়া। সেহরিতে যতটুকু সম্ভব খাওয়া উচিত, এমনকি এক ঢোক পানি খেলেও বরকতের অংশ পাওয়া যায়।

ইফতারের সময় ও তাৎক্ষণিকতা – বিলম্ব না করাই উত্তম

ইফতারের সময় হলো সূর্য ডোবার সাথে সাথে, অর্থাৎ মাগরিবের আজান হওয়ার পরপরই। হাদীসে এসেছে:

“মানুষ যতদিন ইফতার করবে সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।”
(সহীহ বুখারী)

অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ সন্দেহ করে দেরি করে ইফতার করেন, এটি সুন্নাহবিরুদ্ধ। রাসুল (সা.) স্বয়ং সূর্য অস্ত যাওয়ার পরপরই খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার করতেন।

ইফতারের সুন্নাহ ও দোয়া

ইফতার শুরু করার আগে কিছু দোয়া ও নিয়ম রয়েছে। রাসুল (সা.) ইফতারের সময় এই দোয়াটি পাঠ করতেন:

“আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা আফতারতু।”
(অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার দেওয়া রিযিক দিয়ে ইফতার করেছি।)

ইফতার করার সময় খেজুর বা পানি দিয়ে শুরু করা সুন্নত। যদি খেজুর না থাকে, তাহলে পানি দ্বারা ইফতার করাই উত্তম।

ভুল সময় অনুযায়ী রোজা রাখা বা ভাঙা – ইসলামের বিধান

অনেকেই ক্যালেন্ডারের সময় না মেনে নিজেই আন্দাজে সেহরি বা ইফতার করে থাকেন। এটি মারাত্মক ভুল। সেহরি ফজরের সময়ের পর খেলে রোজা হবে না। আবার ইফতারের আগে খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। তাই নির্ভরযোগ্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা আঞ্চলিক সময়সূচির ভিত্তিতে সময় মেনে চলা জরুরি।

বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ, ইসলামিক ওয়েবসাইট বা ঘড়ির মাধ্যমে সহজেই নির্ভুল সেহরি ও ইফতার সময় জানা যায়।

সেহরি ও ইফতারের সময় নির্ধারণে ইসলাম অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও গুরুত্ববহ নিয়ম দিয়েছে। শুধু খালি পেটে থাকা নয়, বরং নির্দিষ্ট সময় মেনে রোজা রাখা হলেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়। তাই মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত সঠিক সময় জানার চেষ্টা করা এবং ভুল তথ্য বা অলসতার কারণে রোজা নষ্ট না করা।

Leave a Comment