ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রমজান মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। তবে কিছু ভুল বা অবহেলার কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে। অনেকেই না জেনে এমন কিছু কাজ করে ফেলেন যা রোজা ভঙ্গ করে দেয় এবং তখন কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) আদায় করতে হয়। এই আর্টিকেলে আমরা ইসলামের আলোকে রোজা ভঙ্গের কারণ ও এর কাফফারা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যাতে প্রতিটি মুসলমান সচেতনভাবে রোজার আদব পালন করতে পারে।
রোজা ভঙ্গের সাধারণ কারণসমূহ
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে কিছু কাজ রোজাকে সম্পূর্ণভাবে ভঙ্গ করে ফেলে। যেমন:
ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাওয়া বা পান করা (ভুলে খেলে রোজা ভঙ্গ হয় না)।
যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা রোজার সময় (যদি ভুলে বা অজ্ঞান অবস্থায় না হয়)।
ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা (অবশ্য অনিচ্ছাকৃত হলে রোজা ভঙ্গ হয় না)।
হস্তমৈথুন বা বীর্যপাত ঘটানো (ইচ্ছাকৃত হলে রোজা ভেঙে যায়)।
ধূমপান করা বা ইনহেলার নেওয়া (ইচ্ছাকৃতভাবে)।
মাসিক বা নিফাস চলাকালে রোজা রাখা।
উল্লেখযোগ্য যে, ভুলবশত বা অজ্ঞতার কারণে যদি এসব কাজ হয়, তবে শরীয়ত তার আলাদা বিধান নির্ধারণ করেছে।
রোজা ভঙ্গের পর কাফফারার বিধান কী?
রোজা ভঙ্গের কারণে শুধুমাত্র “কাজা” বা “কাফফারা” দিতে হবে কিনা তা নির্ভর করে রোজা ভঙ্গের ধরণ ও উদ্দেশ্যের উপর।
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের রোজা ভঙ্গ করে (যেমন: স্ত্রী সহবাস), তাহলে তাকে করতে হবে:
৬০ দিন ধারাবাহিক রোজা রাখা, অথবা
একজন দাসকে মুক্ত করা (বর্তমানে প্রযোজ্য নয়), অথবা
৬০ জন গরীবকে একবেলা খাবার খাওয়ানো।
তবে শুধু ভুলে খেয়ে ফেললে কাফফারার দরকার নেই, বরং রোজা চালিয়ে যাওয়া ফরজ।
যেসব ক্ষেত্রে শুধু কাজা দিতে হবে
রোজা ভেঙে গেলে সবসময় কাফফারা জরুরি হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধু সেই দিনের রোজার কাজা করলেই হয়। যেমন:
অসুস্থতার কারণে রোজা ভঙ্গ করা
সফর অবস্থায় রোজা না রাখা
অনিচ্ছাকৃত বমি
মহিলাদের মাসিক বা প্রসব-পরবর্তী রক্তপাত
এক্ষেত্রে রমজান মাসের পর সুবিধামতো একদিন রোজা রেখে তা পূরণ করতে হবে।
রোজা ভঙ্গ না হওয়ার জন্য করণীয়
রোজা সংরক্ষণ ও তা ভঙ্গ হওয়া থেকে বাঁচার জন্য কিছু করণীয় রয়েছে:
রোজা সম্পর্কিত শরিয়তের মাসআলা-মাসায়েল জানা
ভুলে না খাওয়ার জন্য সতর্ক থাকা
নিজেকে অবসরে বা নির্জন স্থানে বেশি সময় না রাখা
রমজান মাসে সোশ্যাল মিডিয়া বা বিনোদন থেকে দূরে থাকা
নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া করা
এছাড়াও, অন্যদের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াও অনেক সময় রোজাকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে।
রোজা ইসলামের একটি পবিত্র ইবাদত এবং আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ। এটি শুধু খাওয়া-পানাহ থেকে বিরত থাকা নয়, বরং যাবতীয় পাপ ও অশ্লীলতা থেকেও বিরত থাকা। তাই রোজা ভঙ্গের কারণগুলো জানা ও সেগুলো থেকে বাঁচা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গ একটি গুরুতর গুনাহ, যার জন্য কাফফারা আদায় বাধ্যতামূলক। ইসলাম আমাদের সুযোগ দিয়েছে সংশোধনের, তাই ভুল হলে কাজা ও কাফফারা দিয়ে নিজেকে শুদ্ধ করার পথ সবসময় খোলা। আল্লাহ আমাদের রোজাকে কবুল করুন ও রোজা সংরক্ষণে সচেতনতা দান করুন।
