আল্লাহ তায়ালাই রিজিকের একমাত্র দাতা। মানুষ যতই চেষ্টা করুক, যদি আল্লাহ তায়ালা রিজিক না দেন, তবে কিছুই লাভ হয় না। কিন্তু ইসলাম আমাদের এমন কিছু আমল ও দোয়া শিখিয়েছে, যেগুলো পালন করলে আল্লাহ তাঁর রহমতের দরজা খুলে দেন এবং হালাল রিজিক বৃদ্ধি করেন। এই আমলগুলো কেবল রিজিক বৃদ্ধির উপায়ই নয়, বরং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, তাওয়াক্কুল এবং ধৈর্য্যচর্চার মাধ্যম। চলুন জেনে নিই ইসলামিক পদ্ধতিতে রিজিক বৃদ্ধির কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ও দোয়া।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও তাহাজ্জুদ পড়ার গুরুত্ব
রিজিক বৃদ্ধির জন্য সর্বপ্রথম আমল হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করা। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, আল্লাহ তার রিজিকে বরকত দেন।” (তিরমিজি)
তাহাজ্জুদ নামাজও একটি বরকতময় আমল। রাতে সবার ঘুমের সময় আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে প্রার্থনা করলে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আল্লাহ বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” (সূরা গাফির: ৬০)
রিজিক বৃদ্ধির জন্য কুরআনের দোয়া ও আয়াত
কুরআনে রিজিক বৃদ্ধির অনেক দোয়া রয়েছে, যেগুলো নিয়মিত পড়লে আল্লাহ রিজিকের দরজা খুলে দেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া নিচে তুলে ধরা হলো—
১. রিজিক বৃদ্ধির জন্য দোয়া:
“اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ”
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি হালাল দ্বারা আমাকে হারাম থেকে বাঁচিয়ে দিন এবং আপনার অনুগ্রহে অন্যদের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে মুক্ত করুন।
২. সূরা ওয়াকিয়ার আমল:
রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াকিয়া পড়ে, দারিদ্র্য কখনোই তার কাছে আসবে না।” (ইবনে মাজাহ)
৩. সূরা আল মুলক ও সূরা মুজাম্মিল নিয়মিত পাঠ করাও রিজিক বৃদ্ধির সহায়ক।
দান-সদকা ও গরীবদের সহায়তা
ইসলামে দানকে রিজিক বৃদ্ধির চাবিকাঠি বলা হয়েছে। হাদিসে আছে, “দান করলে সম্পদ কমে না, বরং বাড়ে।” (মুসলিম)
গরিব, এতিম ও মিসকিনদের খাওয়ানো, ফিদিয়া প্রদান, মসজিদে খরচ করা এবং ইলম অর্জনের জন্য সহায়তা করা— এসবই রিজিক বৃদ্ধির মাধ্যম। শুধু টাকাপয়সা নয়, বরং খাবার, পোশাক বা শ্রম দিয়েও দান করা যায়।
এছাড়া সদকায়ে জারিয়া যেমন কূপ খনন, কুরআন দান, ইসলামী জ্ঞান ছড়ানো ইত্যাদিও রিজিকের দ্বার খুলে দেয়।
হালাল উপার্জনে মনোযোগ ও হারাম থেকে দূরে থাকা
রিজিক বৃদ্ধির জন্য হালাল পথে উপার্জনের বিকল্প নেই। হারাম উপার্জনে সাময়িক লাভ হলেও তা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “হারাম খাদ্য খাওয়া ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না।” (মুসলিম)
ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি কিংবা ফ্রিল্যান্সিং– যেকোনো ক্ষেত্রেই হালাল রাস্তায় থাকার চেষ্টা করা জরুরি। প্রতারণা, সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। পাশাপাশি বাজারে সত্য বলা, ওজনে ঠিক রাখা ও প্রতিশ্রুতি পালন করার মতো ঈমানদার গুণ থাকা দরকার।
রিজিক বৃদ্ধি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর ইচ্ছাধীন, তবে তিনি আমাদের এমন কিছু আমল শিখিয়েছেন, যেগুলো তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। নিয়মিত নামাজ, দোয়া, কুরআন পাঠ, হালাল রুজির চেষ্টা এবং গরিবদের প্রতি সদয় হওয়া— এসবই একজন মুসলমানের রিজিকের বরকতের মূল চাবিকাঠি। আল্লাহর উপর নির্ভর করে চেষ্টা চালিয়ে গেলে তিনি অবশ্যই দরজা খুলে দেন।
