ইসলাম একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যা মানুষের আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের প্রতিটি দিকের দিকনির্দেশনা দেয়। সেই নির্দেশনার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো ‘পর্দা’, যা নারীর ইজ্জত, মর্যাদা ও আত্মরক্ষার সুরক্ষাকবচ। ইসলাম নারীকে সম্মানিত করেছে এবং তার মর্যাদা রক্ষায় সুনির্দিষ্টভাবে কিছু নির্দেশনা প্রদান করেছে। পর্দা মানা শুধু একটি আধ্যাত্মিক দায়িত্ব নয় বরং একটি সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্বও।
ইসলামে পর্দার গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য
ইসলামি পর্দার মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজে নারী ও পুরুষের মাঝে শালীনতা বজায় রাখা এবং যিনা ও অন্যান্য পাপাচারের পথ রুদ্ধ করা। কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং মুসলিম নারীদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের উপর চাদরের কিছু অংশ ঝুলিয়ে দেয়। এতে তাদেরকে চিনে ফেলা সহজ হবে এবং তারা বিরক্তির শিকার হবে না।”
(সূরা আহযাব: ৫৯)
এই আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, পর্দা নারীর নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। ইসলাম নারীকে ঘরের অলংকার হিসেবে নয়, বরং জ্ঞানের আলোয় আলোকিত ও আত্মমর্যাদাশীল একজন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলে, যার সামাজিক ভূমিকা রয়েছে, তবে তা যেন হয় সতীত্ব ও শালীনতার পরিপূর্ণতায়।
ইসলামী পর্দার নিয়মাবলী: কীভাবে পালন করবেন?
ইসলামে পর্দার বিষয়টি শুধু পোশাকেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং চলাফেরার ক্ষেত্রেও পর্দা পালন জরুরি। নিচে ইসলামী পর্দার মূল কিছু নিয়ম তুলে ধরা হলো:
পোশাকের শর্তাবলি:
ঢিলেঢালা ও অশালীনতা-বর্জিত হতে হবে
এমনভাবে পরিধান করতে হবে যেন শরীরের আকৃতি স্পষ্ট না হয়
পোশাকটি অবশ্যই পুরো শরীর ঢেকে রাখবে (মুখ ও হাত নিয়ে আলেমদের মতভেদ আছে, তবে অধিকাংশ বলেন জনসম্মুখে হাত ও মুখ খোলা রাখা জায়েজ)
কাপড় স্বচ্ছ বা পাতলা হবে না
পুরুষদের সঙ্গে আচরণে পর্দা:
পরপুরুষের সঙ্গে বিনা প্রয়োজন যোগাযোগ সীমিত রাখা
হাসি ঠাট্টা, দৃষ্টি বিনিময়, মিশ্রতা এড়িয়ে চলা
অপ্রয়োজনে সামাজিক মাধ্যমে কথোপকথন থেকে বিরত থাকা
কণ্ঠস্বরের পর্দা:
কুরআন বলেছে:
“তোমরা নম্র কণ্ঠে কথা বলো না, যাতে যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে তারা কুভাবনায় লিপ্ত না হয়।”
(সূরা আহযাব: ৩২)
অর্থাৎ, কথাবার্তায় নম্রতা ও শালীনতা বজায় রাখা আবশ্যক।
নারীদের করণীয়: কীভাবে নিজের পর্দা রক্ষা করবেন?
বর্তমান আধুনিক ও ফ্যাশনকেন্দ্রিক সমাজে পর্দা পালন অনেকের কাছে কঠিন মনে হতে পারে। তবে কিছু সচেতন উদ্যোগ ও আত্মপ্রত্যয় থাকলে একজন নারী সহজেই নিজের পর্দা রক্ষা করতে পারেন। নিচে কিছু করণীয় বিষয় তুলে ধরা হলো:
✅ নিজেকে আল্লাহভীরু হিসেবে গড়ে তোলা:
আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জন হল পর্দা রক্ষার মূল চাবিকাঠি। আল্লাহর ভয়ই একজন নারীকে পর্দা পালনে উৎসাহিত করবে।
✅ সঠিক ইসলামি জ্ঞান অর্জন:
ইসলামের মূল উৎস কুরআন ও হাদীস থেকে সঠিকভাবে পর্দার বিধান জানলে কেউ তা অবহেলা করতে পারবে না। ইসলামি বই, বক্তৃতা, আলেমদের ক্লাস হতে পারে একটি বড় সহায়তা।
✅ নিজ পরিবারে ইসলামি পরিবেশ গড়ে তোলা:
একজন নারী যদি পরিবারের ছোট সদস্যদের ইসলামী পর্দার গুরুত্ব শেখান, তবে তা ধীরে ধীরে সমাজেও প্রভাব ফেলবে।
✅ পর্দা মানার কারণে সমালোচনায় মনঃক্ষুণ্ণ না হওয়া:
বর্তমান সমাজে যারা ইসলামী পর্দা মানেন, তারা অনেক সময় নানা রকম কটাক্ষের শিকার হন। তবে একজন মুসলিমা বিশ্বাস রাখেন, আল্লাহর সন্তুষ্টিই তার প্রধান লক্ষ্য, মানুষের নয়।
ইসলামী পর্দা নারীকে কেবল বাহ্যিকভাবে আচ্ছাদিত করে না বরং তার আত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক মর্যাদাকে সমুন্নত রাখে। এটি নারীর নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং আত্মমর্যাদার রক্ষাকবচ। একজন মুসলিম নারীর জন্য পর্দা পালন কোনো বাধা নয়, বরং একটি সম্মানজনক অনুশাসন যা তাকে সমাজের কলুষতা থেকে রক্ষা করে এবং আখিরাতের নাজাতের পথ উন্মুক্ত করে।
আজকের এই সময়ে আমাদের প্রতিটি নারীকে উচিত — আত্মসচেতনতা, তাকওয়া ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে ইসলামি পর্দার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা, যা আগামী প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
