ইসলামে পিতা-মাতা হলেন সন্তানের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তাদের মর্যাদা ও অধিকার কেবল পারিবারিক নয়, বরং এটি একটি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বহু স্থানে পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহারকে ঈমানের নিদর্শন হিসেবে গণ্য করেছেন। ইসলামী শিক্ষায় যেমন পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা ও খেদমতের নির্দেশ রয়েছে, তেমনি তাদের ওপরও সন্তানের সঠিক লালন-পালনের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে।
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো।” (সূরা বনি ইসরাঈল, ১৭:২৩)।
এ আয়াত থেকেই বোঝা যায়, ইসলামে পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার শুধুমাত্র একটি সামাজিক আদর্শ নয়, বরং এটি একটি ইবাদতের অংশ।
সন্তানদের প্রধান দায়িত্ব হলো:
বিনয় ও নম্র আচরণ করা
তাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা
বার্ধক্যে তাদের খেদমতে মনোযোগী থাকা
আর্থিক ও মানসিক সহযোগিতা করা
কোনোভাবেই ‘উফ’ শব্দটিও না বলা
হাদীসে এসেছে, “জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে”। অর্থাৎ মায়ের সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে জান্নাতের পথ খুলে যায়।
সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য
ইসলামে যেমন সন্তানের ওপর পিতা-মাতার অধিকার রয়েছে, তেমনি পিতা-মাতার ওপরও রয়েছে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব। একটি শিশু জন্মের পর তাকে সঠিকভাবে লালন-পালন, আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই ইসলামী দায়িত্ব।
পিতা-মাতার প্রধান দায়িত্বগুলো হলো:
সন্তানের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা
ইসলামি শিক্ষা ও ধর্মীয় চেতনায় তাকে গড়ে তোলা
আদব-কায়দা, সততা, দয়া ও ইমানি গুণাবলী শেখানো
হারাম ও অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখা
সৎ বন্ধু ও পরিবেশে সন্তানকে পরিচালনা করা
প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক অভিভাবক দায়িত্বশীল এবং তার অধীনস্তদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে” (সহীহ বুখারী)।
পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও তার শাস্তি
ইসলামে পিতা-মাতার অবাধ্যতা অত্যন্ত গুরুতর গোনাহ। হাদীসে এসেছে, “তিন ব্যক্তির দিকে কিয়ামতের দিনে আল্লাহ দৃষ্টি দিবেন না… তাদের একজন হলেন—পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান।” (সহীহ মুসলিম)
পিতা-মাতার দুঃখজনক আচরণ যেমন—তাদের কথা না শোনা, অবজ্ঞা করা, গালি দেওয়া, বা তাদের বিরুদ্ধে রাগান্বিত হওয়া—এগুলো ইসলামে হারাম। এমন আচরণ আল্লাহর গজব ডেকে আনতে পারে।
একজন সন্তানের জীবনে বরকত ও শান্তির মূল উৎস হলো পিতা-মাতার দোয়া। তাই কখনো তাদের কষ্ট দিয়ে নয়, বরং তাদের খুশি করেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা উচিত।
ইসলামে পিতা-মাতার অধিকার যেমন অস্বীকারযোগ্য নয়, তেমনি সন্তানের সঠিক গঠনেও তাদের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্ক ভালো থাকলে পরিবার ও সমাজ উভয়ই শান্তিময় হয়। চলুন, আমরা সবাই পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্বশীল হই, তাঁদের সম্মান করি এবং তাঁদের দোয়া লাভে জীবনকে সার্থক করি।
