ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা মানুষের জীবনকে নৈতিকতা, ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধের উপর দাঁড় করায়। এই নৈতিকতার অন্যতম বড় দিক হলো বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য। কুরআন ও হাদিসে অসংখ্যবার বাবা-মায়ের মর্যাদা ও তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদতের পাশাপাশি বাবা-মায়ের সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন, যা প্রমাণ করে ইসলামে তাদের স্থান কতটা উচ্চ।
বর্তমান সময়ে অনেকেই পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব কমিয়ে দেখেন, কিন্তু ইসলামের আলোকে বাবা-মায়ের মর্যাদা কেবল পারিবারিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি ইবাদতের একটি অংশ। বাবা-মায়ের খেদমত করা, তাদের দোয়া অর্জন করা এবং তাদের সম্মান বজায় রাখা একজন মুসলমানের জন্য বড় সৌভাগ্য।
কুরআনে বাবা-মায়ের মর্যাদা
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন—
“তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। এবং বাবা-মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করো।” (সুরা নিসা: ৩৬)
এছাড়াও সুরা ইসরা (আয়াত: ২৩-২৪)-তে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, বাবা-মায়ের সাথে নম্রভাবে কথা বলতে এবং তাদের জন্য দোয়া করতে— “হে আমার প্রভু! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন-পালন করেছেন।”
কুরআনের এই নির্দেশনা প্রমাণ করে, বাবা-মায়ের মর্যাদা ইসলামে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম উপায় তাদের সন্তুষ্টি অর্জন।
হাদিসে বাবা-মায়ের স্থান
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“আল্লাহর সন্তুষ্টি বাবা-মায়ের সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি বাবা-মায়ের অসন্তুষ্টির মধ্যে।” (তিরমিজি)
অন্য এক হাদিসে একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার ভালো ব্যবহার কার প্রতি সবচেয়ে বেশি প্রাপ্য?” নবীজি ﷺ উত্তর দিলেন— “তোমার মায়ের প্রতি।” সাহাবি আবার জিজ্ঞাসা করলে তিনি তিনবার “মায়ের” কথা বললেন এবং চতুর্থবারে বললেন— “তোমার বাবা।” (বুখারি ও মুসলিম)
এটি প্রমাণ করে মা ও বাবার প্রতি ইসলামে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাবা-মায়ের দোয়ার বরকত
ইসলামে বাবা-মায়ের দোয়া সন্তানের জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলে। হাদিসে এসেছে, বাবা-মায়ের দোয়া সন্তানের জন্য বরকত, আর তাদের অভিশাপ সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বাবা-মায়ের খেদমত করলে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি, সাফল্য ও রহমত নাযিল করেন। অনেক আলেম বলেছেন, বাবা-মায়ের দোয়া ছাড়া জীবনে প্রকৃত বরকত আসে না।
বাবা-মায়ের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত
ইসলাম শিক্ষা দেয়—
সবসময় তাদের সাথে বিনয়ী ও কোমলভাবে কথা বলতে হবে।
তাদের চাহিদা ও প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বার্ধক্যে তাদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করা উচিত নয়, যদি তা শরীয়তের বিরুদ্ধে না যায়।
তাদের জন্য জীবিত ও মৃত্যুর পরও দোয়া করতে হবে।
ইসলামে বাবা-মায়ের মর্যাদা আল্লাহর ইবাদতের পরেই আসে। কুরআন ও হাদিসে বারবার বলা হয়েছে, তাদের সম্মান করা ও খেদমত করা শুধু পারিবারিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি ফরজ ইবাদত। যে ব্যক্তি বাবা-মায়ের সন্তুষ্টি অর্জন করে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জন করে। তাই মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত বাবা-মায়ের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল, দায়িত্ববান ও ভালোবাসাপূর্ণ থাকা, যাতে দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা সফল হতে পারি।
