মানুষ মূলত ভুল-ভ্রান্তির পুতুল। দুনিয়াতে প্রতিনিয়ত মানুষ কোনো না কোনোভাবে গুনাহে লিপ্ত হয়—চোখের গুনাহ, জিভের গুনাহ, অন্তরের গুনাহ কিংবা হাত-পায়ের গুনাহ। আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ভুল ক্ষমা করে দেন যদি বান্দা সত্যিকারের অনুশোচনায় নিজেকে পরিবর্তনের পথে ফেরে। ইসলাম একটি এমন দীন যা গুনাহের পরও ক্ষমার দরজা খোলা রেখেছে, কারণ আল্লাহ তায়ালা গাফ্ফার (অত্যন্ত ক্ষমাশীল) ও রহীম (পরম দয়ালু)। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে—ইসলামে গুনাহ মাফের সহজ উপায় কী?
চলুন জেনে নিই, পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে কীভাবে সহজে এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে গুনাহের ক্ষমা পাওয়া যায়।
খাঁটি তওবা করা – গুনাহ মাফের মূল চাবিকাঠি
তওবা (তাওবা) হলো গুনাহের পর নিজের ভুল বুঝে আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে সে কাজ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। আল্লাহ বলেন,
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা করো।” (সূরা তাহরীম: ৮)
খাঁটি তাওবার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে:
১. গুনাহ ত্যাগ করা
২. আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া
৩. ভবিষ্যতে গুনাহ না করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া
যদি গুনাহ কারও হক্ব (অধিকার) সংক্রান্ত হয়, তবে তার চতুর্থ শর্ত হচ্ছে—উক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়া বা তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।
বেশি বেশি ইসতিগফার করা – রহমতের বৃষ্টি ঝরার অন্যতম উপায়
“আস্তাগফিরুল্লাহ” বলা খুব সহজ, কিন্তু এর অর্থ ও প্রভাব অত্যন্ত গভীর। এটি হলো পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রিয় শব্দ।
রাসূল (সা.) বলেছেন:
“আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বার ইসতিগফার করি।” (বুখারি)
বেশি বেশি ইসতিগফার করা গুনাহ মাফের বড় মাধ্যম, তা ছোট হোক বা বড়। বিশেষ করে সালাতের পর, রাতের নির্জনতায়, এবং দিনে বিভিন্ন সময় “আস্তাগফিরুল্লাহ” পড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে আল্লাহ দ্রুত খুশি হন এবং গুনাহ মাফ করে দেন।
সালাত ও কুরআনের মাধ্যমে গুনাহ মোচন
নামাজ হলো মুমিনের মিরাজ। রাসূল (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়ে, তার গুনাহ স্রোতের মতো ধুয়ে যায়, যেমন একটি নদীতে দিনে পাঁচবার গোসল করলে তার শরীরে কোনো ময়লা থাকে না।” (মুসলিম)
এছাড়া, কুরআন তিলাওয়াতও অন্তরের গুনাহ দূর করে। কুরআন আল্লাহর বাণী, তা পাঠ করা একদিকে যেমন ইবাদত, তেমনি আত্মার পরিশুদ্ধিও। নিয়মিত সূরা ইয়াসিন, সূরা তাওবা, সূরা মুলক ইত্যাদি পাঠ গুনাহ মাফের কারণ হতে পারে।
দান-সদকা, ভালো কাজ ও মানুষের হক আদায় করা
ইসলামে দান-সদকার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“দান গুনাহের আগুন নিভিয়ে দেয়, যেমন পানি আগুন নিভিয়ে দেয়।” (তিরমিযি)
এছাড়া, মানুষকে ভালো কাজ শেখানো, সৎ পরামর্শ দেওয়া, কারও উপকারে আসা, মুচকি হাসি, পথ থেকে কষ্টদায়ক কিছু সরানো—এসব ছোট কাজও গুনাহ মোচনের উপায়। আর যারা অন্যের হক নষ্ট করেছেন, তাদের হক ফেরত দেওয়া বা ক্ষমা চাওয়াও গুনাহ থেকে মুক্তির অপরিহার্য পথ।
গুনাহ করা মানুষের স্বভাব, কিন্তু তা থেকে ফিরে আসা এবং ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে ঈমানের পরিচয়। আল্লাহ তাআলা অসীম দয়ালু, তিনি হাজার গুনাহগার বান্দাকেও ক্ষমা করে দেন, যদি সে অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসে। গুনাহ মাফের সহজ উপায় হচ্ছে: তওবা করা, ইসতিগফার পড়া, নামাজ কায়েম করা, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং দান-সদকার মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর নিকটবর্তী করা।
তাই আসুন, আমরা এখনই গুনাহ থেকে ফিরে এসে আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তওবা করি এবং একটি পরিশুদ্ধ জীবনের দিকে ফিরে যাই।
