তওবা করার সঠিক নিয়ম ও দোয়া ইসলামিক ভাবে

মানুষ ভুল করে, পাপ করে—এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দার প্রতি এতটাই দয়ালু যে, বান্দা যদি আন্তরিকভাবে তওবা করে, তবে তিনি সব পাপ ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কুরআনে ও হাদিসে তওবার গুরুত্ব এবং নিয়মাবলি অত্যন্ত সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইসলামে তওবা শুধু মুখের কথা নয়, বরং এটি অন্তরের গভীর অনুশোচনা, পাপ বর্জন এবং ভবিষ্যতে সৎ পথে চলার দৃঢ় অঙ্গীকার। নিচে তওবার সঠিক নিয়ম ও দোয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

তওবা কী এবং কেন জরুরি?

‘তওবা’ শব্দের অর্থ হলো ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন। ইসলামী পরিভাষায়, তওবা মানে হলো—পাপ বা গুনাহ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং সৎ পথে চলার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করা।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফল হও।”
 (সূরা নূর: ৩১)

তওবা মানুষের অন্তরের পবিত্রতা ফিরিয়ে আনে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও সফলতার পথ প্রশস্ত করে।

তওবার সঠিক নিয়ম কী?

ইসলামে তওবা করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত বা ধাপ রয়েছে। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • আন্তরিক অনুশোচনা: অন্তর থেকে নিজের গুনাহ বা পাপের জন্য লজ্জিত হওয়া।

  • তাৎক্ষণিকভাবে পাপ ত্যাগ করা: পাপাচার বা ভুল কাজ অবিলম্বে বন্ধ করা।

  • আবার পাপ না করার অঙ্গীকার: ভবিষ্যতে ঐ কাজ আর না করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করা।

  • প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া: যদি কারও হক নষ্ট করা হয়, তবে তা ফেরত দেওয়া বা মাফ চাওয়া।

তওবা করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা সময় বাধ্যতামূলক নয়। তবে একাকী, শান্ত পরিবেশে বসে, আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে তওবা করাই উত্তম।

তওবার গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া

তওবার জন্য কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন দোয়া রয়েছে, যেগুলো নিয়মিত পাঠ করলে গুনাহ মাফ পাওয়ার আশাবাদ থাকে। নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:

আল্লাহুম্মাগ্‌ফিরলি ধানবি কুল্লাহু, দিক্কাহু ও জল্লাহু, আওয়ালাহু ও আখিরাহু, আলানিয়াতাহু ও সিররাহু।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার সব গুনাহ মাফ করে দিন – ছোট হোক বা বড়, প্রকাশ্য হোক বা গোপন, পুরাতন হোক বা নতুন।

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
(Rabbighfir li wa tub ‘alayya, innaka anta At-Tawwabu Ar-Rahim)
অর্থ: হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তওবা কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি তওবা গ্রহণকারী ও দয়ালু।

আস্তাগফিরুল্লাহ রব্বি মিন কুল্লি জানবিন ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে আমার সব গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকে ফিরে আসছি।

কখন তওবা করলে দোয়া কবুল হয়?

আল্লাহর রহমতের দরজা ২৪ ঘণ্টা খোলা। তবে কিছু বিশেষ সময় রয়েছে যখন তওবা বেশি কবুল হয় বলে হাদিসে উল্লেখ আছে:

  • তাহাজ্জুদের সময়: গভীর রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে, তখন আল্লাহ বান্দার প্রার্থনায় সবচেয়ে বেশি সাড়া দেন।

  • জুমার দিন: জুমার দিনের কিছু মুহূর্ত রয়েছে যখন দোয়া ফেরত যায় না।

  • রোজার সময়: বিশেষ করে ইফতারের পূর্বমুহূর্তে।

  • রমজান ও আরাফার দিন: এসব দিন গুনাহ মাফের শ্রেষ্ঠ সুযোগ।

তওবা দেরি না করে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করা উচিত। হাদিসে এসেছে, “তওবা দেরি করে করো না, কারণ কখন মৃত্যু এসে যাবে তা কেউ জানে না।” (তিরমিজি)

তওবা ইসলামের একটি মহামূল্যবান নেয়ামত। যেকোনো পাপ করেও মানুষ আল্লাহর কাছে ফিরে এসে নতুন করে পথ চলার সুযোগ পায়। আমাদের উচিত, প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করা, পাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা এবং আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। কারণ আল্লাহ কখনোই তাঁর বান্দার তওবা ফিরিয়ে দেন না যদি তা হয় অন্তর থেকে। আজই শুরু হোক আমাদের তওবার নতুন যাত্রা।

Leave a Comment